তিন দশক পর, প্রথমবার বাদামী বামনের যুগল সন্ধান বিজ্ঞানীদের চমকে দিল
- By Jamini Roy --
- 20 October, 2024
১৯৯৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি বাদামী বামনের আবিষ্কার নিশ্চিত করেছিলেন। সেই সময় এই মহাজাগতিক বস্তুটি তারকা হওয়ার পক্ষে খুব ছোট এবং গ্রহের চেয়ে বেশ বড় হওয়ায় একে ‘মধ্যবর্তী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে নতুন পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে যে এটি একক কোনো বাদামী বামন নয়, বরং দুটি বাদামী বামনের যুগল একটি ছোট তারাকে প্রদক্ষিণ করছে।
গবেষকরা চিলি ও হাওয়াইতে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে নতুন দুটি গবেষণার মাধ্যমে এই সন্ধান প্রকাশ করেছেন। Gliese 229B নামে পরিচিত যে বাদামী বামনটি তিন দশক আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেটি আসলে দুটি ভিন্ন বাদামী বামন—Gliese 229Ba এবং Gliese 229Bb। Gliese 229Ba-এর ভর বৃহস্পতির চেয়ে ৩৮ গুণ বেশি, আর Gliese 229Bb-এর ভর বৃহস্পতির তুলনায় ৩৪ গুণ বেশি।
এই যুগল বাদামী বামন পৃথিবী থেকে মাত্র ১৯ আলোকবর্ষ দূরে লেপাস নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত, যা মহাজাগতিক মানদণ্ডে বেশ কাছাকাছি। তারা প্রতি ১২ দিনে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে, আর এদের মধ্যে দূরত্ব পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদের মাত্র ১৬ গুণ। এই ধরনের ঘনিষ্ঠ বাইনারি বাদামী বামনের জোড়া খুবই বিরল।
বাদামী বামনদের বৈশিষ্ট্য তাদের নক্ষত্র বা গ্রহ না হয়ে এই দুইয়ের মধ্যবর্তী হওয়ায়। এদের ভর হাইড্রোজেন ফিউশন করার জন্য যথেষ্ট নয়, যা সাধারণত নক্ষত্রকে শক্তি যোগায়। ক্যালটেকের পদার্থবিদ্যা বিভাগের গবেষক স্যাম হোয়াইটবুক বলেন, "বাদামী বামন এমন একটি বস্তু যা একটি গ্রহ ও একটি নক্ষত্রের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এরা ডিউটেরিয়াম নামক হাইড্রোজেনের একটি ভারী রূপ পোড়াতে সক্ষম হলেও হাইড্রোজেন ফিউশন করতে পারে না।" সাধারণত এদের ভর বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৮১ গুণের মধ্যে থাকে।
১৯৯৫ সালটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এক যুগান্তকারী বছর ছিল, কারণ সেই বছরই প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট বা সৌরজগতের বাইরের গ্রহ আবিষ্কৃত হয়। Gliese 229B আবিষ্কারের পর থেকে বাদামী বামনের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়। তবে সেই সময় থেকে Gliese 229B সম্পর্কে বেশ কিছু অসংগতি দেখা যায়, বিশেষত এর ভর প্রায় ৭১ গুণ বৃহস্পতির সমান হওয়ায় এটি আরও উজ্জ্বল হওয়ার কথা ছিল।
ক্যালটেকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরি জুয়ানের মতে, "এই ভরের কোনো বস্তু সাধারণত নক্ষত্র হয়ে যায়, তবে Gliese 229B তা নয়। নতুন পর্যবেক্ষণে আমরা বুঝতে পারলাম এটি দুটি ভিন্ন বাদামী বামন।"
এই নতুন আবিষ্কার মহাকাশে তারাদের গঠন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কীভাবে এই বাদামী বামনদের গঠন হয় এবং এদের সঙ্গে দৈত্যাকার গ্রহগুলোর সম্পর্ক কী। জুয়ান বলেন, "এই অনুসন্ধান আমাদের দেখাচ্ছে যে বাদামী বামনরা অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত কনফিগারেশনে আসতে পারে। আমাদের সর্বদা মহাজাগতিক বিস্ময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"
তথ্যসুত্রঃ রয়টার্স